📿 কাঁই প্রসঙ্গ
✍️ বলন কাঁইজির - আধ্যাত্মিকবিদ্যা, আত্মতত্ত্ব, দিব্যজ্ঞান ও বলন দর্শন
| দিব্যজ্ঞান ও বলন দর্শন |
🔹 কাঁইয়ের পরিচয়
মরমি সাধকগণ ‘স্রষ্টা’ শব্দটির আধ্যাত্মিক অর্থ নির্ধারণ করেছেন “জীবদেহে সৃষ্টিশক্তি বহনকারী এক প্রকার জীবজল” হিসেবে। এই রস যৌবনকালে উদ্ভুত হয়ে জীবকে বিদ্যুৎ ধারণ ও উৎপাদনের শক্তি দেয়—এটাই সৃষ্টিশক্তি।
যেমন—
শিশু-কিশোরদের শুক্র বা ডিম্বাণু বিদ্যুৎধারণে অক্ষম,
সবুজ ধান বা কাঁচা ফল থেকে অঙ্কুরোদ্গম হয় না।
এই সৃষ্টিশক্তি যদি যথাযথভাবে ধ্বংস হয় (যেমন ডিম সিদ্ধ করলে), তখন সে প্রাণও সৃষ্টি করতে পারে না। এই জীবজলকেই মরমিগণ রূপক অর্থে কাঁই, ব্রহ্মা, কৃষ্ণ, কালা ইত্যাদি নামে অভিহিত করেছেন।
🔹 আধ্যাত্মিক কবিতায় কাঁই
বাংলা মরমিগীতিতে কাঁই বিষয়ক অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়—
“চাতক প্রায় অহর্নিশি, চেয়ে থাকে কালোশশী...” — লালন
“কালা আমায় পাগল করেছেরে...” — অজ্ঞাত
“তোমার লাগিয়ারে সদায়, মন আমার কান্দে বন্ধুরে...” — কানাইলাল শীল
“শ্যাম কালিয়ারে কৃষ্ণ কালিয়া, কী সুখে রয়েছে রাধা...” — বলন কাঁইজি
🔹 বর্ণনীয় রহস্য ও প্রতীক
যেখানে ভারতীয় সমাজে ফর্সা বর্ণের প্রতি আকর্ষণ প্রবল, সেখানে গীতিকবিগণ কেন “কালো” বা “শ্যাম” রঙকে এত গুরুত্ব দেন?
কারণ—“কালো” এখানে এক আধ্যাত্মিক প্রতীক। এটি হল সৃষ্টিশক্তি বহনকারী কাঁইয়ের রূপ। স্রষ্টা, ব্রহ্মা, বা আল্লাহ—প্রত্যেকেই এই জীবজল বা জীবনশক্তির রূপক নাম।
🔹 কাঁই-আল্লাহ-লর্ড : একক উৎস
বাংলা: কাঁই
সংস্কৃত: ব্রহ্মা
আরবি: ﺍﻠﻠﻪ (আল্লাহ)
ইংরেজি: Lord
এরা কেউই নিরাকার কল্পনা নয়। বরং প্রত্যেকেই একটি আত্মদর্শনযোগ্য, সত্তাবিশিষ্ট শক্তি। যারা এ শক্তিকে প্রত্যক্ষ করেন, তারাই কাঁইজি, ব্রহ্মচারী বা অলিউল্লাহ উপাধিতে অভিষিক্ত হন।
🔹 উপাসনার বাস্তবতা
মরমিগণের মতে, উপাস্য এমন হতে হবে—
যাকে ধরা যায়, দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, অনুভব করা যায়।
নিরাকার, অদৃশ্য, অজ্ঞেয় কোনো সত্তা নয়। কাঁই ও সাঁই—এই দুই-ই বাস্তব, জীবজগতের অভ্যন্তরে বিরাজমান এবং সাধনার দ্বারা প্রত্যক্ষ করা সম্ভব। 🔹 কাঁই পরিভাষার ব্যুৎপত্তি
মরমি সাধকগণ ‘স্রষ্টা’ শব্দটির আধ্যাত্মিক অর্থ নির্ধারণ করেছেন “জীবদেহে সৃষ্টিশক্তি বহনকারী এক প্রকার জীবজল” হিসেবে। এই রস যৌবনকালে উদ্ভুত হয়ে জীবকে বিদ্যুৎ ধারণ ও উৎপাদনের শক্তি দেয়—এটাই সৃষ্টিশক্তি।
-
কালো + ঈশ্বর → কাঈ
-
উচ্চারণের সুবিধায় → কাঁই
-
কাঁই + জি (সম্বোধন) → কাঁইজি
অর্থ:
ব্রহ্মা, বিরিঞ্চি, কৃষ্ণ বা কালোশক্তির প্রতিরূপ জীবজল, যা জীবসৃষ্টির প্রাথমিক শক্তি হিসেবে কাজ করে।
🔹 উপসংহার
স্রষ্টা, ব্রহ্মা, কাঁই, আল্লাহ—সবই জীবের ভেতরে বিরাজমান এক জীবনীশক্তির প্রতীক।
আধ্যাত্মিক জ্ঞান না থাকলে এ শক্তিকে অনুভব করা সম্ভব নয়।
সাধনার চূড়ান্ত স্তরে পৌঁছেই কাঁইজি হওয়া যায়।
স্রষ্টাকে চিনতে চাইলে বাহিরে নয়—নিজের ভেতরে ফিরে দেখুন।
📚 তথ্যসূত্র:
“আত্মতত্ত্ব ভেদ (ষষ্ঠ খণ্ড)” — বলন কাঁইজি
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন