ইসলামে জন্মান্তরবাদ

কোরআন ভিত্তিক ইসলামে জন্মান্তরবাদ – জীবন-মৃত্যুর পুনঃসৃষ্টি

কোরআন ভিত্তিক ইসলামে জন্মান্তরবাদঃ জীবন-মৃত্যু ও পুনঃসৃষ্টির চক্র

ভূমিকা

ইসলামে জন্মান্তরবাদ বা পুনর্জন্ম প্রসঙ্গ নিয়ে বহু প্রশ্ন ওঠে। যদিও কোরআনে সরাসরি "জন্মান্তর" শব্দ ব্যবহৃত হয়নি, তবে জীবন-মৃত্যু, কবর, পুনঃসৃষ্টি ও কর্মফলের পুনরাবৃত্তি সম্পর্কিত বহু আয়াত পাওয়া যায়। এই ব্লগে আমরা কোরআনের আলোকে জন্ম-মৃত্যুর চক্র, দুইবার মৃত্যু ও দুইবার জীবন, বরযখ, কর্মফল এবং পুনঃসৃষ্টির ধারণা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করবো।

ইসলামে জন্মান্তরবাদের ধারণা

কোরআন বলে, মানুষকে প্রথমে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করা হয়, পরে শুক্রবিন্দু থেকে, আলাক আকারে মাতৃগর্ভে, তারপর শিশুরূপে জন্ম। মৃত্যুর পর মানুষকে পুনরায় জীবিত করা হবে। এভাবে জীবন-মৃত্যু-পুনঃসৃষ্টি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া (সূরা-হজ ৫, সূরা-ফাতির ১১)।

কোরআনে জীবন-মৃত্যুর চক্র

  • মৃত্যু → কবর → পুনঃজীবন → বিচার → পুরস্কার/শাস্তি → পুনঃসৃষ্টি
“তোমাদেরকে মৃত্যু থেকে জীবন্ত করেছেন। আবার তোমাদেরকে মৃত্যু ঘটাবেন ও পুনরায় জীবন্ত করবেন।” (সূরা-বাকারা ২৮)

দুইবার মৃত্যু ও দুইবার জীবন

সূরা-গাফির (৪০:১১) এ বলা হয়েছে: “তুমি আমাদেরকে দুইবার মৃত্যু ঘটালে এবং দুইবার জীবন দান করলে।” এ থেকে বোঝা যায় যে মানুষের জীবন ও মৃত্যু একাধিকবার সংঘটিত হয়, যা পুনঃসৃষ্টির ধারণার সঙ্গে সম্পর্কিত।

বরযখ ও অন্তরাল

কোরআন বলছে, মৃত্যুর পরে পুনঃজীবনের পূর্ব পর্যন্ত মানুষকে একটি অন্তরালে রাখা হয়।

“তাদের সম্মুখে থাকবে বারযখ, পুনরুজ্জীবনের দিন পর্যন্ত।” (সূরা-মুমিনুন ১০০)

বরযখ মানুষের জন্য শাস্তি বা সংশোধনের একটি পর্যায়, যেখানে পূর্বজীবনের স্মৃতি আর থাকে না।

কর্মফল ও পুনঃসৃষ্টি

কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ ন্যায় বিচার করেন এবং প্রত্যেককে তার কর্ম অনুসারে প্রতিদান দেন (সূরা-ইউনুস ৪)।

যদি কেউ সৎকর্ম না করে পশুর মতো আচরণ করে, তবে তাকে পশুর আকৃতিতে পুনঃসৃষ্টি করা হতে পারে (সূরা-আরাফ ১৬৬, সূরা-বাকারা ৬৫)। আবার যারা নিষিদ্ধ কাজ করে, তাদের নতুন রূপ বা সাদৃশ্য আকৃতিতে সৃষ্টি করা হতে পারে (সূরা-ওয়াকিয়া ৬১)।

মানুষ থেকে পশুরূপে অবতরণ

“আমি তোমাদেরকে সুন্দর আকৃতিতে সৃষ্টি করেছি, কিন্তু কর্মফলে তোমাদেরকে হীনতাগ্রস্তদের হীনতায় পরিণত করি।” (সূরা-ত্বীন ৪-৫)

এ থেকে বোঝা যায়, কর্মফলের কারণে মানুষ তার মর্যাদা হারিয়ে পশু আকৃতি পেতে পারে।

শেষ বিচারের পরিণতি

  • প্রথম শিঙ্গায় ফুৎকার দিলে সবাই মৃত্যুবরণ করবে। (সূরা-যুমার ৬৮)
  • দ্বিতীয় শিঙ্গায় ফুৎকার দিলে সবাই পুনর্জীবিত হবে। (সূরা-আবাসা ২২, সূরা-ইনফিতার ৪)
  • কবর থেকে সবাই প্রভুর দিকে ছুটে যাবে এবং বিচার দিবসের মুখোমুখি হবে। (সূরা-হজ ৭)

এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত—জান্নাত বা জাহান্নাম। (সূরা-হুদ ১০৬-১০৭)

উপসংহার

কোরআনের আলোকে জীবন-মৃত্যু-পুনঃসৃষ্টি এক চক্রের মতো চলতে থাকে। মৃত্যু শেষ নয়, বরং নতুন জীবনের সূচনা। কর্মফলই নির্ধারণ করে কে কোন অবস্থায় পুনঃসৃষ্টি হবে। তাই ইসলামের শিক্ষা হলো—সৎকর্মে জীবন যাপন করা, যাতে শেষ বিচারে জান্নাত লাভ করা যায়।

FAQs

ইসলামে জন্মান্তরবাদ স্বীকৃত কি?

সরাসরি জন্মান্তর শব্দ নেই, তবে জীবন-মৃত্যু ও পুনঃসৃষ্টির পুনরাবৃত্তি কোরআনে বর্ণিত।

মৃত্যুর পরে কি সঙ্গে সঙ্গে বিচার হয়?

মৃত্যুর পর মানুষ বরযখে থাকে। বিচার হবে কেয়ামতের দিনে।

কর্মফলের কারণে কি মানুষ পশু হতে পারে?

হ্যাঁ, কিছু আয়াতে উল্লেখ আছে যে কর্মদোষে মানুষকে পশুর রূপ দেওয়া হয়।

দুইবার মৃত্যু ও দুইবার জীবন কী বোঝায়?

এটি মানুষের পুনঃসৃষ্টি প্রক্রিয়া এবং আল্লাহর বিচার ব্যবস্থার অংশ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন